কুমিল্লার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার নমুনা নেয়া হয়। সেখানে নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পরীক্ষাগারে। লম্বা ও ধীরগতির এ প্রক্রিয়ার কারণে করোনা রিপোর্ট পেতে ৬ জেলার প্রায় চার শতাধিক প্রবাসীকে প্রতিদিন বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সূত্রমতে, সরকার বিদেশগামীদের জন্য কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করলেও সব জেলায় প্রবাসীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হয়নি। যার কারণে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে এসে কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার প্রবাসীদের করোনা পরীক্ষার নমুনা দিয়ে একদিন পরে সনদ নিতে হচ্ছে। অনেকে আবার নমুনা দেয়ার পরদিন অনলাইনের মাধ্যমেও সনদ সংগ্রহ করছেন।
আরও পড়ুন: দেশবাসীকে আগ্রহী করতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে টিকা নেয়ার আহ্বান বিএনপির
তবে কুমিল্লায় আসা এ ছয়টি জেলার বিদেশগামী যাত্রীদের করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদান এবং সনদ সংগ্রহে চরম হয়রানি আর বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহে ধীরগতিসহ নানা জটিলতায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। বয়স্ক ও নারীদের এই সমস্যায় অনেক বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। প্রতিদিন করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য ৬ জেলা থেকে ওই হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ বিদেশগামী আসছেন।
সরেজমিনে বুধবার গিয়ে দেখা গেছে, করোনার পরীক্ষা করাতে ৬ জেলা থেকে এসেছেন চার শতাধিক বিদেশগামী। এসব বিদেশগামীদের সকলেই এদিক-ওদিক ছুটছেন। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাদের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে দুবার। একবার দাঁড়াতে হচ্ছে পরীক্ষার ফি জমা দেয়ার জন্য এবং আরেকবার নমুনা জমা দিতে।
আরও পড়ুন: কোভিড টিকা কি মিলিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে?
এখানে করোনা পরীক্ষার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেয়া স্মার্ট কার্ডধারী প্রবাসীদের ৩০০ টাকা এবং যাদের কার্ড নেই তাদের এক হাজার ৫০০ টাকা খরচ হচ্ছে।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থেকে আসা বাবুল মিয়া বলেন, করোনা পরীক্ষা করাতে এসে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ আবেদন গ্রহণ এবং নমুনা সংগ্রহে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি। এখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই এবং মানুষ শুধু ধাক্কাধাক্কি করছে।
চাঁদপুরের কচুয়া থেকে আসা ওমান প্রবাসী আবু সাঈদ বলেন, আমি সকাল সাড়ে ৬টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এখন সাড়ে ১১টা বাজলেও নমুনা দিতে পারিনি। অথচ ১১টার দিকে এসেও ভেতরে ঢুকে অনেকে নমুনা দিয়ে চলে গেছে। ভেতরে টাকা দিলে সব কাজই দ্রুত হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৪.১৭ শতাংশ
ফেনীর লালপুর থেকে আসা দুবাই প্রবাসী জানে আলম বলেন, তারা অনেক ধীরগতিতে নমুনা নিচ্ছে। দুপুর ১টার পর তারা নমুনা সংগ্রহ করে না। এর আগেও তাদের কারণে অনেক জেলার প্রাবাসীদের বিদেশ যাওয়া বাতিল হয়েছে। পরে পুনরায় টিকিট করে বিদেশ যেতে হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে আসা পারভেজ হোসেন বলেন, এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ প্রবাসী আসেন পরীক্ষা করাতে। কিন্তু মাত্র একটি বা দুটি বুথে নমুনা নেয়া হয়।
এই হয়রানি বন্ধে প্রতিটি জেলায় বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। আর না হয় এখানে আরও কয়েকটি বুথ বাড়ানো হোক এবং নজরদারির মাধ্যমে অনিয়ম বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সেরাম থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা আমদানির অনুমোদন
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের লোকবলের চরম সঙ্কট রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এনে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জনের নমুনা নেয়া হচ্ছে। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ল্যাবে জমা দেয়া যায় ততক্ষণ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করছি।’
অনেক সময় ২টার পরও নমুনা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৃহত্তর কুমিল্লার ছয় জেলা থেকে লোক আসায় এবং জনবল কম থাকায় কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে প্রবাসীদের। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কাউকে ফিরিয়ে না দিয়ে সঠিক সময়ে সনদ দেয়ার।
আরও পড়ুন: নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানালেন শেখ হাসিনা
এছাড়া অন্যান্য অনিয়ম থাকলে সেগুলো তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান।